
প্রকল্পের টাকায় চলছে মেট্রোরেল
- আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩০:২৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩০:২৬ পূর্বাহ্ন


* প্রকল্প থেকে টাকা ধার হিসেবে নিয়ে খরচ করা হচ্ছে
* মেট্রোরেল চালাতে গত দুই অর্থবছরে ২৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ
* ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়
* ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়
* এক বছরে খরচ বেড়েছে ৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা
প্রকল্পের টাকা খরচ করে রাজধানীতে মেট্রোরেল চালানো হচ্ছে। অথচ ওই টাকা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু সেখান থেকে টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ বিল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, এমনকি ঋণের সুদ পর্যন্ত পরিশোধ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকল্প থেকে টাকা ধার হিসেবে নিয়ে খরচ করা হচ্ছে। পরে তা পরিশোধ করা হবে। রাজধানীতে মেট্রোরেল চালাতে গত দুই অর্থবছরে ২৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। ফলে এক বছরে খরচ বেড়েছে ৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আয় থেকে খরচ মেটানোর কথা থাকলেও, প্রকল্পের টাকা থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টিকে অনেকে মনে করছেন নৈতিক ও কাঠামোগত সমস্যা হিসেবে। ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর মেট্রোরেলে যাত্রী ও আয় দুই-ই বাড়ছে। কিন্তু দৈনন্দিন খরচ চালাতে প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। গত দুই বছরে মেট্রোরেলে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তার মধ্যে ১৪৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে এসেছে। প্রথম বছরে খরচ হয় ৭০ কোটি ৫১ লাখ, দ্বিতীয় বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকায়। ডিএমটিসিএল অর্থাৎ মেট্রো পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রথম বছরে খরচ করে ৫৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং পরের বছর খরচ করে ৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৭৩ কোটি ২ লাখ টাকা আয় ছিল আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ভাড়া থেকেই প্রথম বছরে ২৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং পরের বছরে ৪০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা এসেছে। বাকি আয় অন্যান্য খাত থেকে এসেছে। বর্তমানে মেট্রোরেল চালানোর জন্য প্রকল্প থেকে যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি, ইউটিলিটি বিল, খরচযোগ্য সামগ্রী, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সহায়তা সংক্রান্ত সেবা, এমনকি ঋণের সুদও। মেট্রোরেল বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার চলাচল করছে। ওই পথটিই ম্যাস র?্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নামে প্রকল্পের আওতায়। বর্তমানে দৈনিক গড়ে চার লাখ যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করছে। তাছাড়া মেট্রোরেলে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত অংশ যুক্ত হচ্ছে। ফলে যাত্রী আরো বাড়বে। ওই বর্ধিত অংশের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলমান। স্টেশনের দ্বিতীয় তলার নির্মাণকাজ এগোচ্ছে এবং ৩০ জুন পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। মূলত কমলাপুর সংযোজন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রাথমিক অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। নতুন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে যাবে ৮ হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ থেকে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত রয়েছে ১৬টি স্টেশন,। তবে কমলাপুর যুক্ত হলে তা বেড়ে ১৭টি হবে।
এদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের টাকা দিয়ে মেট্রোরেল পরিচালনা খরচ মেটানো ঠিক হচ্ছে না। ওই অর্থ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ। ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যও আলাদা বরাদ্দ থাকা দরকার। আর তা না হলে সুদের ওপর সুদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, প্রকল্প থেকে পরিচালন খাতে খরচ করা হচ্ছে। যদিও এটা হওয়ার কথা ছিল না। পুরো খরচটা ডিএমটিসিএলের করার কথা। ওই সম্পদের মালিক ডিএমটিসিএল। আয় করছে কোম্পানি আর ব্যয়ও কোম্পানি করবে। তবে আপাতত ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে থাকায় সাময়িকভাবে প্রকল্পের টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্প থেকে খরচ করা টাকাগুলো পরে ফেরত দেয়া হবে। তিনি আর প্রকল্প থেকে একবারই ঋণের সুদ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন জানান, আয় বেড়েছে মানে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে। ওই বাড়তি চাপ সামলাতে জনবল, রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে। তবে খরচ প্রকল্প থেকে কেন করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ